নবদিন ডেস্ক:
বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলায় বন্যায় মানুষের চেয়ে গবাদিপশুর কষ্ট বেড়েছে দ্বিগুন। এরফলে, মানুষ গবাদিপশু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন। প্রাণিখাদ্যের সংকটের কারণে একদিকে যেমন গরু-মহিষ ও ছাগলকে চাহিদা অনুযায়ী খাবার দেওয়া যাচ্ছে না, অপরদিকে শুকনো জায়গার অভাবে পশুগুলোকে নিরাপদ স্থানে রাখার জায়গা হচ্ছে না।
যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধির ফলে তীরবর্তী সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের শতাধিক গ্রামের প্রায় এক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এতে প্রায় ৪ হাজার চারণভূমি প্লাবিত হয়ে গবাদিপশুর অন্যতম প্রধান খাদ্য ঘাসের যোগান বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানা গেছে । এই পরিস্থিতিতে যারা গরু-মহিষ ও ছাগল লালন পালন করেছেন তারা পড়েছেন চরম বিপাকে।
রোববার বন্যাদুর্গত এলাকা সরেজমিন ঘুওে দেখা যায়, পশুগুলোর খাবার সংগ্রহের জন্য কৃষক এবং খামার মালিকদের মধ্যে রীতিমতো হাহাকার পড়ে গেছে। ফলশ্রুতিতে, পশুগুলো নিয়ে কৃষক এবং খামার মালিকরা অন্ধকার দেখতে শুরু করেছেন। নিয়মিত খাবার দিতে না পারায় এরই মধ্যে মহিষ, গরু-ছাগলগুলোর ওজন কমতে শুরু করেছে। এভাবে চললে সেগুলো হাঁড্ডিসার হওয়ার সাথে সাথে হাটে তুলে ভালো দাম পাওয়ার সম্ভাবনা কম।
প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী জানা যায়, বন্যাদুর্গত তিন উপজেলায় ৪২ হাজার ৭২৩টি গরু, ২৮ হাজার ৫৮৭টি ছাগল, ৪ হাজার ৭৬৬টি ভেঁড়া এবং ১ হাজার ৪৫টি মহিষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে সবেচেয়ে বেশি ৪০ হাজার গরু, ২৭ হাজার ছাগল, ৪ হাজার ভেঁড়া এবং ১ হাজার মহিষ পানিবন্দি হয়েছে জেলার সারিয়াকান্দি উপজেলায়।
সারিয়াকান্দি উপজেলার চরপাড়ার কৃষক রনজিত জানান, চরের কোথাও শুকনো জায়গা নেই। ক্ষুধার্ত মহিষগুলোকে খাওয়ানোর মতো ঘাসও নেই। তাই বাধ্য হয়ে তিনি মহিষগুলোকে নিয়ে খাবারের খোঁজে বেরিয়ে পড়েছেন। কিন্ত যেসব মাঠে ফসল আছে সেখানে জমির মালিকরা মহিষ নিয়ে ভিড়তে দিচ্ছেন না। ফলে সবখানে মহিষগুলো খাবারও পাচ্ছে না।
ধুনট উপজেলার বৈশাখী চরের আকবর জানান, বাড়িতে পানি ঢুকে পড়ায় ৫টি গরু নিয়ে তিনি রাস্তার ওপর আশ্রয় নিয়েছেন। ঘাস আর খড়ের অভাবে গরুগুলোর প্রয়োজন অনুযায়ী খাওয়াতে পারছেন না। একই চরের মোশারফ হোসেন জানান, গরু পালন ও কেনা বেচা করে তিনি সংসার চালান বলেন জানান। তিনি হাটে বিক্রি করবেন বলে তিনটি ষাঁড় লালন-পালন করছিলেন। কিন্তু, বাজারে ঘাস না মেলায় গরুকে নিয়মিত খাওয়াতে পারছেন না।
বগুড়া জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রফিকুল ইসলাম জানান, চাহিদা অনুযায়ী খাবার দিতে না পারলে গবাদিপশুগুলোর ওজন কমে যাবে। কোরবানির পশুগুলোর ওজন কমলে কৃষক ও খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশী। তবে এই সংকট থেকে উত্তরণে খামার মালিকদের বিকল্প পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। প্রাণিখাদ্যের জন্য ইতিমধ্যে বরাদ্দও চাওয়া হয়েছে।