মার্জিয়া ইসলাম:
আজ আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি- গর্ভধারণের ৮ম সপ্তাহের লক্ষণ, উপসর্গ, শিশুর বৃদ্ধি ও কিছু পরামর্শ নিয়ে। চলুন তবে শুরু করা যাক।
আপনি এখন গর্ভাবস্থার অষ্টম সপ্তাহে অবস্থান করছেন, অষ্টম সপ্তাহটা আপনার জন্য অনেক দিক থেকেই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ সপ্তাহে এসেও হরমোনের প্রভাবে আপনার শরীর ও মনের পরিবর্তন চলমান রয়েছে। অন্যদিকে, ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে থাকা আপনি এতক্ষণে আল্ট্রাসাউন্ড করিয়ে অনাগত সন্তানের হার্টবিট শুনে নিশ্চয়ই শিহরিত হয়েছেন।
এ সময় আপনার শরীরের নানা পরিবর্তনও লক্ষ্যনীয়। এরই ধারাবাহিকতায় স্তনে রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে এর চারিদিকে ভেরিকোছ (ঠধৎরপড়ংব) নামক শিরা গড়ে উঠছে। এ পরিবর্তনগুলোই বলে দেয় আপনার শরীর- শিশুর প্রথম খাদ্য তৈরীর জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। অনেকের ক্ষেত্রে, এসময় হলুদাভ একধরনের পদার্থ নিঃসৃত হতে পারে। যা পরবর্তীতে বাচ্চা শালদুধ হিসেবে পেয়ে থাকে। তবে সবার ক্ষেত্রে এটি না হলেও চিন্তিত হওয়ার কিচ্ছু নেই।
৮ম সপ্তাহে গর্ভাবস্থার লক্ষণ
গর্ভধারণের ৮ম সপ্তাহে এসে আপনার শরীরে নানা রকম পরিবর্তন দেখা দিতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে, স্বাভাবিক আকারে থাকা জরায়ুটি- বাড়ন্ত ভ্রুণটিকে জায়গা করে দিতে ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে। গর্ভধারণের এ সপ্তাহে ঘন ঘন টয়লেটে যাওয়া একটা স্বাভাবিক ঘটনা। গর্ভধারণের প্রথম ও শেষ তিন মাসে এমনটা হওয়া খুবই স্বাভাবিক।
হরমোনের পরিবর্তনের কারণে এ সময়ে গর্ভকালীন অবসাদ, মানসিক চাপ, মুড সুইং, অতিরিক্ত উদ্বেগ এবং হতাশা লক্ষ্য করা যায়। অনেকের ক্ষেত্রে আবার- অতি আবেগপ্রবণ বা কখনো কখনো উৎফুল্ল হয়ে ওঠার পাশাপাশি- গর্ভধারণের লক্ষনগুলো নিয়ে অস্বস্তিতেও ভুগতে দেখা যায়।
এসময় চার ভাগের একভাগ গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রে স্পটিং হয়ে থাকে। তবে এসময় যদি অতিরিক্ত বমি হওয়ার সাথে সাথে পানিশূন্যতা ও ওজন কমে যাওয়ার লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়-তবে সাথে সাথে ডাক্তারকে অবগত করা উচিত।
গর্ভাবস্থার অষ্টম সপ্তাহে শিশুর বৃদ্ধি
যদিও, আপনি গর্ভাবস্থার অষ্টম সপ্তাহে অবস্থান করছেন কিন্তু, বিকাশের দিক দিয়ে আপনার গর্ভের শিশু আছে ষষ্ঠ সপ্তাহে। এই সপ্তাহটি, ভ্রূণের বৃদ্ধির জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে আপনার গর্ভস্ত শিশুর আকার- একটি কিডনি বীনের সমান। যা প্রতিদিন প্রায় এক মিলিমিটার হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
গত পর্বে আপনারা জেনেছেন-ইতিমধ্যে ভ্রূণের চোখ ও কানের গঠন শুরু হয়ে গেছে। আর বর্তমানে বিকাশ হচ্ছে- বাচ্চার হাত এবং পায়ের ছোট্ট ছোট্ট আঙ্গুলগুলো। যেগুলো দেখতে এখন অনেকটা হাঁসের পায়ের মতো দেখায়। অন্যদিকে বাচ্চার হাঁটু, উরু, গোড়ালি এবং আঙ্গুল পুরোপুরি বিকশিত হতে আরও বেশ কিছুদিন সময় লাগবে। এসময়ে আপনার গর্ভে ভেসে বেড়ানো ভ্রূণটি- হাতদুটো কব্জির কাছ থেকে ভাঁজ করে হৃদপিণ্ডের কাছে গুটিয়ে রাখে।
ভ্রূণের শ্বাসনালী, গলা, শ্বাসতন্ত্রের এবং লাংসের গঠন সাধারণত এসপ্তাহ থেকেই শুরু হয়ে যায়। ভ্রূণের মাংসপেশি, বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ যেমন চোখ, কান ইত্যাদি- অন্যান্য টিস্যুর সাথে একে অপরটি যুক্ত হওয়ার সাথে সাথে- শিশুর নার্ভগুলো শাখা প্রশাখা মেলতে শুরু করে।
এ সময়ে এসে ভ্রূণের হৃদপিণ্ডটি দুটি চেম্বারে বিভক্ত হয়ে যায়- যারফলে প্রতি মিনিটে ভ্রূণের হৃদস্পন্দন ১৫০ বার ওঠানামা করে। এই পরিবর্তনগুলো বাচ্চার বিকাশেরই একটি অংশ।
ইতিমধ্যে গঠিত হওয়া প্লাসেন্টা ধীরে ধীরে মায়ের জরায়ুর দেয়ালে আটকে যেতে শুরু করেছে। অন্যদিকে, মানব শরীরের আকার নিতে থাকা ভ্রূণটির লেজের মত অংশটি মিলিয়ে যাচ্ছে।
এ সপ্তাহে করনীয়
শুরু থেকেই বলা হয়েছে গর্ভধারণের কারণে কিছু কিছু মায়েদের ক্ষেত্রে মাথা ব্যাথা হতে পারে। তবে এমন অবস্থায় যেকোনো ধরনের ওষুধ সেবনের আগে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া অত্যন্ত জরুরী। তাছাড়া, এ সময় যেহেতু গর্ভের সন্তানের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়- তাই এখন থেকেই অস্বাস্থ্যকর খাবার পরিহার, পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম নেয়া, প্রচুর পরিমানে পানিপান করা আবশ্যক।
অন্যদিকে, রাতে যদি আপনার পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম না হয়- সেক্ষেত্রে দুপুরে একটু ঘুমিয়ে নিয়ে-ক্ষতিটা পুষিয়ে নেয়া যেতে পারে।
গর্ভধারণের এ সময়ে ক্লান্তি বোধ হওয়াটা অনেকটাই স্বাভাবিক। সে অনুযায়ী বিকেল বেলা একটু হাঁটা, শোবার আগে হালকা গরম দুধ পান করা, অথবা বই পড়ে সময় কাটানো যেতে পারে।
গর্ভাবস্থার ৮ সপ্তাহের দিকে আলট্রাসাউন্ড করালে বাচ্চার হার্টবিট বোঝা যেতে পারে। তবে না বোঝা গেলেও তাতে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। কোনকোন ক্ষেত্রে আলট্রাসাউন্ড দ্বারা বাচ্চার হার্টবিট বুঝতে- ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে। কারণ, বাচ্চার হার্টবিট- কোন সময়ে মেশিনে ঠিকঠাক ধরা পড়বে তা নির্ভর বাচ্চার অবস্থান, প্লাসেন্টার অবস্থান এবং মায়ের ওজনের উপর।
গর্ভধারণের প্রথম দিককার সপ্তাহগুলোতে অধিক রক্তপাত, অস্বাভাবিক ডিসচার্জ, তলপেটে মাত্রাতিরিক্ত ব্যাথা থাকলে সাথে সাথে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করুন।
কারণ, ভ্রুণের ক্রোমসোমের যেকোন অস্বাভাবিকতায় এসমস্যাগুলো দেখা দিতে পারে এবং সেটা মিসক্যারেজ কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এ কারণে, গর্ভবতী মায়েদের উচিত সব দিকগুলো খেয়াল রেখে- গর্ভধারণের সময়টাতে মনে যে প্রশ্নই আসুক না কেন-তাতে কোন ধরণের দ্বিধা না রেখে ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করা।
এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য ধন্যবাদ। পরবর্তী ভিডিওতে সপ্তাহ অনুযায়ী গর্ভাবস্থা সিরিজের ৯ম সপ্তাহের লক্ষণ ও পরিবর্তন নিয়ে- আপনাদের সামনে হাজির হবো।
ভাল থাকবেন সুস্থ থাকবেন, আল্লাহ হাফেজ।