এস,আই শাওন:
বগুড়ার শেরপুর উপজেলার ধুনট মোড় তালতলা-সেরুয়া বটতলা সড়কের বেহাল দশা। দেখার যেন কেউ নেই। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই খানা-খন্দ সৃষ্টি হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই সড়কটি।
স্থানীয়রা জানায়, ধুনট মোড় তালতলা থেকে ফরেস্ট অফিস হয়ে সেরুয়া বটতলা পর্যন্ত সড়কটির কাজ শেষ হওয়ার বছর না ঘুরতেই সড়কে তৈরি হয়েছে অসংখ্য গর্ত। সড়কে চলাচলকারী মালবাহী যানবাহন নিয়মিতই আটকে যাচ্ছে এসব খানা-খন্দে। ঘটছে দুর্ঘটনা, হতাহত হচ্ছে সড়কে চলাচলকারী মানুষ।
একদিকে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে সড়ক সংস্কার অন্যদিকে সড়কের গা ঘেঁষে ওঠা বিল্ডিংগুলোর পানি নিস্কাশনের যথোপযুক্ত ব্যবস্থা না থাকায় বিল্ডিংগুলোর পানি রাস্তার উপর দিয়ে গড়ায় সড়কের বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য ছোট-বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। দীর্ঘ এক বছর ধরে ভাঙা ও খানাখন্দকে ভরা সড়ক দিয়ে রিকশা-ভ্যান, অটো ও সিএনজি, বাস ও ট্রাক চালকরা ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। প্রতিদিনই ঘটছে ছোটখাট দুর্ঘটনা। সড়কের বেহাল দশার কারণে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন স্থানীয়রা।
শেরুয়া নামাপাড়ার অটোচালক বাবু জানান, জীবীকার জন্য ভোরবেলাতেই গাড়ী নিয়ে শহরের দিকে যেতে হয় কিন্তু, বাড়ি থেকে বের হয়ে ধুনট মোড় তালতলা বা সেরুয়া বটতলা যেদিকেই যাই না কেন পড়তে হয় বিড়ম্বনায় গত একবছর ধরে রাস্তার যে অবস্থা, তা এর আগে আমি কোনোদিন দেখিনি। খুব ধীরে যেতে হয়, এতে সময় লাগে অনেক বেশি। তাছাড়াও ভাঙ্গাচোড়া রাস্তায় প্রায় সময়ই ভ্যান, রিকশা, অটো উল্টে দুর্ঘটনা ঘটছে। অনেকের হাত-পা ভেঙেছে। গাড়ির যন্ত্রাংশ নষ্ট হচ্ছে। বর্তমানে সড়কটিতে পায়ে হেঁটে চলাও অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
সড়কটির সেরুয়া দহপাড়া মোড় হয়ে তালতলা পর্যন্ত অংশে ছোট-বড় গর্ত ও খানাখন্দকে ভরা। পাকা সড়ক হলেও কোথাও কোথাও পিচ, সুরকি, ইট উঠে গিয়ে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টি হলে স্থানীয়দের দুর্ভোগের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। সড়কের ওপর জমে থাকা পানিতে বোঝাই যায় না কোন গর্ত কত বড়, আর কোন গর্তে কাঁদা আছে। এ সড়ক দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে নানা সমস্যায় পড়ছেন পথচারীরা। যানবাহনের পাশ দিয়ে চলতে গিয়ে সড়কের গর্তের পানি ছিটকে গিয়ে কাপড় নষ্ট হচ্ছে। অন্যদিকে রাস্তা খারাপ হওয়ায় অতিরিক্ত ভাড়া দিলেও অনেক সময় যানবাহন যেতে চায় না। ছোটখাট যানবাহনগুলো প্রায়শই উল্টে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় ব্যাক্তি বলেন, ধুনট মোড় তালতলা থেকে সেরুয়া বটতলা রাস্তাটি বার বার সংস্কার করলেও সড়কটি কোনও সময়ই ভালো থাকে না। এখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বহীনতা তো আছেই তবে এ রাস্তা নষ্ট হওয়ার অন্যতম কারণ হলো রাস্তার দুপাশের বিল্ডিংয়ের মালিকগণ। বিল্ডিংয়ের কিছু কিছু মালিক বিল্ডিংয়ের ব্যবহৃত পানি ও বৃষ্টির পানি গড়াতে পাইপ লাইনের মাধ্যমে ড্রেনে সংযোগ দিলেও অধিকাংশ বিল্ডিং মালিক বিল্ডিংয়ের ব্যবহৃত পানি ও বৃষ্টির পানি রাস্তার উপর দিয়ে গড়ায় এতে করে রাস্তার যা অবস্থা হওয়ার তাই হচ্ছে।
আজিজার রহমান নামে এক পথচারী জানান, সড়কটিতে এত বেশি গর্ত যে যে কোন যানবাহন যাতায়াতে শরীরের ওপর কাঁদা পানি ছিটকে পড়ে কাপড়চোপড় ভিজে যায় নোংরা হয়ে যায়।
মোটরসাইকেল চালক ফরিদুজ্জামান ফরিদ জানান, সড়কটি দিয়ে মোটরসাইকেল চালানো কঠিন। বৃষ্টি হলে সড়কটি বিপজ্জনক হয়ে উঠে। কোথায় গর্ত, কোথায় কাঁদা কোনোটাই বোঝা যায় না।
স্থানীয় সূত্র আরো জানায়, ঢাকা বগুড়া মহাসড়কের যানজট এড়াতে সেরুয়া বটতলা হয়ে ধুনট মোড় তালতলা পর্যন্ত ভিতরের এই রাস্তাটি দিয়ে ট্রাক, মাইক্রো, ট্রলি (বালুবাহী), বাইক, ভ্যান, অটোসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করে। কিন্তু রাস্তার দু’পাশের ভবন মালিকদের খামখেয়ালীপনায় রাস্তাটির বেহাল দশার সৃষ্টি হয়েছে।
রাস্তার বেহাল দশার ব্যাপারে জানতে চাইলে ১০নং শাহবন্দেগী ইউপি চেয়ারম্যান আল-আমিন মন্ডল জানান, এ রাস্তাটির জন্য বরাদ্দ পেলেই সংস্কার করা হবে।