মার্জিয়া ইসলাম:
আজ আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি- গর্ভধারণের দশম সপ্তাহের লক্ষণ, উপসর্গ, শিশুর বৃদ্ধি ও কিছু পরামর্শ নিয়ে। চলুন তবে শুরু করা যাক।
ইতিমধ্যে আপনি এক এক করে গর্ভধারণের নয়টি সপ্তাহ পার করে ফেলেছেন। গর্ভাবস্থার দশম সপ্তাহে আপনাকে স্বাগতম! গর্ভবতী বলতেই আমাদের চোখের সামনে বড়সড় পেটের হবু মায়ের ছবি ভেসে উঠলেও গর্ভাবস্থার দশম সপ্তাহে আপনার পেট তেমন বড়সড় নাও হতে পারে। তবে, ইতিমধ্যে আপনি অন্যান্য শারীরিক পরিবর্তন ঠিকই বুঝতে শুরু করেছেন। গর্ভধারণের দশম সপ্তাহে, গর্ভবতী মা এবং গর্ভস্থ সন্তানের শারীরিক পরিবর্তনগুলো খুব দ্রুত চলতে থাকে। ঠিক এ সময়েও- গর্ভবর্তী মা’কে বাইরে থেকে দেখতে প্রেগন্যান্ট মায়েদের মত মনে না হলেও- তার শারীরিক ও মনের পরিবর্তনগুলো বেশ লক্ষ্যনীয়। এই পরিস্থিতিগুলোকে কোন সমস্যা হিসেবে ভাববেননা। কারণ, এই পরিবর্তনগুলো- আপনার শরীরে জন্ম নেয়া প্রেগন্যান্সি হরমোনের কারণেই ঘটে থাকে।
১০ম সপ্তাহে গর্ভাবস্থার লক্ষণ
গত পর্বেও বলা হয়েছে গর্ভাবস্থায় মায়েদের ক্লান্ত লাগা, এবং দুর্বল লাগা খুবই সাধারণ ঘটনা। গর্ভাবস্থার মাঝামাঝি সময়ে একটু স্বস্থিবোধ করলেও গর্ভাবস্থার শুরু এবং শেষের দিকে এই উপসর্গগুলো আপনাকে তাড়িয়ে বেড়াবে। অন্যদিকে, কিছু কিছু খাবারের প্রতি অনীহা তৈরীর পাশাপাশি হঠাৎ করেই কিছু কিছু খাবারের প্রতি ঝোঁক বেড়ে যেতে পারে। গর্ভাবস্থায় অধিকাংশ মায়েদের ক্ষেত্রে বুক জ্বালাপোড়া হওয়ার ঘটনা ঘটে থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রথম সন্তান জন্মের সময় মায়েরা সবচেয়ে বেশী এ সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকে। এ সমস্যা গর্ভধারণ থেকে শুরু করে বাচ্চা জন্মদান পর্যন্ত আসা যাওয়া করতে পারে।
গর্ভাবস্থার দশম সপ্তাহে আপনার তলপেটে হালকা গোলাকার ভাব দেখা দিতে পারে। তবে, প্রথমবার মা হতে যাওয়া নারীদের ক্ষেত্রে পেটের আকার বৃদ্ধি পেতে ১২ থেকে ১৬ সপ্তাহ লেগে যেতে পারে। তবে এই দীর্ঘসুত্রিতায় ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নেই। অন্যদিকে, একাধিকবার মা হওয়াদের ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত আগেই পেটের আকার বেড়ে থাকে।
গর্ভবতী মায়েরা হঠাৎ অবস্থান পরিবর্তন যেমন-বিছানা বা চেয়ার থেকে ওঠা, কাশি দেয়া বা বিছানায় নড়াচড়া করার সময় রাউন্ড লিগামেন্ট পেইন অনুভব করতে পারেন। অন্যদিকে, এসময় মাথাব্যথা এবং পিঠের ব্যথার পাশাপাশি মুখে অতিরিক্ত লালা অনুভব হতে পারে।
গর্ভধারণের পূর্ব থেকে শুরু করে ডেলিভারি পর্যন্ত ডিসচার্জ হওয়া খুব স্বাভাবিক একটি বিষয়। এসময় গর্ভবতী মায়েদের জ্ঞান হারানোর অনুভূতি হতে পারে। যদি দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় আপনার জ্ঞান হারানোর মতো ভাব হয় তাহলে বসে পড়ুন, অথবা একপাশে কাত হয়ে শুয়ে পড়ুন। এতে করে অচেতন অনুভূতি কেটে যাবে।
গর্ভধারণের দশম সপ্তাহে গর্ভের শিশুর বৃদ্ধি
পূর্ববর্তী সপ্তাহগুলোর মতই, গর্ভাবস্থার দশম সপ্তাহেও শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশ খুব দ্রুত গতিতেই চলতে থাকে। এ সময় আপনার গর্ভস্থ ভ্রণটির আকার একটি খেজুরের সমান। গর্ভাবস্থার দশম সপ্তাহের দিকে এসে বাচ্চার কানের নালীগুলো আরো সু-সংগঠিত হয়ে বিস্তৃত হতে থাকে। পাশাপাশি ভ্রূণের চোখের পাতার পরিপূর্ণ গঠন হলেও গর্ভাবস্থার প্রায় ২৭ সপ্তাহ পর্যন্ত ভ্রূণটি চোখের পাতাগুলো বন্ধ অবস্থাতেই রাখে। গর্ভধারণের দশম সপ্তাহে এসে-শিশুর চোয়ালের হাঁড় গঠিত হওয়ার সাথে সাথে দুধ দাঁতগুলো চোয়ালের সাথে দৃঢ়ভাবে সংযুক্ত হয়।
তাছাড়া এ সপ্তাহেই ভ্রূণের পাকস্থলী থেকে হজমে সহায়তাকারী রস উৎপন্ন হয় এবং ভ্রূণের পরিপাকতন্ত্র কর্মক্ষম হয়। এছাড়াও ভ্রূণের লিভার থেকে পিত্তরস এবং অগ্নাশয় থেকে ইনসুলিন তৈরির সাথে সাথে বাচ্চার আঙুলে নখও গজাতে শুরু করে। এই সময়ে শিশুর হৃদপিণ্ডটি পুরোপুরি গঠিত হয়ে- একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের চাইতে ২-৩ গুন বেশি হারে মিনিটে ১৮০ বারের মত স্পন্দিত হয় ।
এ সপ্তাহে করনীয়
সুস্থ মা মানেই সুস্থ শিশু। এ কারণে শিশুর পরিপূর্ণ বৃদ্ধির জন্য মাকে প্রয়োজনীয় সকল খাবারের যোগান দিতে হবে। কারণ, গর্ভাবস্থায় শিশুর বৃদ্ধি অনেকাংশে নির্ভর করে মায়ের খাবারের উপর।
চা, কফি, কোমল পাণীয় পরিহার করে দিনে অন্তত ৮ গ্লাস পানি পান করা জরুরী। তবে, দিনের শেষ ভাগে পানির পরিমান কম রেখে দিনের শুরুর ভাগে বেশি পানি পান করা উচিত। কারণ, রাতে বেশি পানি পান করলে বার বার টয়লেটে যাওয়ায় আপনার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে।
গর্ভাবস্থায় অনেক নারীই অদ্ভুত স্বপ্ন দেখে থাকেন, এ কারণে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে থাকে। এক্ষেত্রে প্রথমেই ঘুমের ওষুধ খাওয়ার চিন্তা মাথায় না আনাই ভালো। তবে, যদি ওষুধের প্রয়োজন হয়, তবে অবশ্যই তা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করুন।
গবেষণায় দেখা গেছে নেশা জাতীয় দ্রব্য যেমন- অ্যালকোহল, ক্যাফেইন, তামাক ইত্যাদি গ্রহণের অভ্যাসের ফলে- গর্ভপাত, বিকলাঙ্গ শিশু জন্ম, সময়ের আগেই সন্তান প্রসব, বাচ্চার ওজন কম থাকার মত ঘটনা ঘটে থাকে। গর্ভধারণের প্রথম তিন মাস এবং শেষের তিন মাসে ঝাঁকুনি লাগার মত রাস্তায় জার্নি এমনকি সাধারণ জার্নিও এড়িয়ে চলুন। কারণ, এটি গর্ভবতী মায়েদের জন্য খুবই বিপজ্জনক হতে পারে।
পাশাপাশি, আপনার শরীরের ক্ষমতার তুলনায় ভারি কাজ পরিহার করুন। আর যেসকল কাজ আপনাকে ঝুঁকে বা নুয়ে করতে হয় সে কাজ থেকে দুরে থাকুন । গর্ভবতী মায়েরা বা তাদের পরিবারের সদস্যগণ উপরোক্ত বিষয়গুলো জানলেও না মানার প্রবণতা থাকায় গর্ভবতী মা এবং সন্তান দুজনেই ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
এ কথা বৈজ্ঞানিক ভাবেও প্রমানিত যে, মায়ের সাথে গর্ভস্ত শিশুর আত্তিক সম্পর্ক থাকে- আর তাই, গর্ভবতী মাকে সর্বদা হাসিখুশি ও চাপমুক্ত রাখলেই গর্ভস্থ শিশুর মানসিক বিকাশও সুষ্ঠু হয়।
এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য ধন্যবাদ। পরবর্তী ভিডিওতে সপ্তাহ অনুযায়ী গর্ভাবস্থা সিরিজের ১১তম সপ্তাহের লক্ষণ ও পরিবর্তন নিয়ে- আপনাদের সামনে হাজির হবো।
ভাল থাকবেন সুস্থ থাকবেন, আল্লাহ হাফেজ।