মার্জিয়া ইসলাম:
আজ আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি-গর্ভধারণের ২১তম সপ্তাহের লক্ষণ, উপসর্গ, শিশুর বৃদ্ধি ও কিছু পরামর্শ নিয়ে। চলুন তবে শুরু করা যাক।
গর্ভধারণের ২১তম সপ্তাহে এসে আপনার গর্ভস্থ ভ্রূণের প্রয়োজনীয় প্রায় সব অঙ্গ প্রত্যঙ্গ গঠিত হয়ে যায়। ধীরে ধীরে ভ্রূণটি আকারে বড় হওয়ার সাথে সাথে অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলোর পরিপূর্ণ বিকাশ সম্পন্ন হয়। এ পর্যায়ে এসে, ভ্রূণের ছোট ছোট হাত-পাগুলো তার শরীরের অন্যান্য অংশের সমানুপাতিক হয়ে যায়।
২১তম সপ্তাহে গর্ভাবস্থার লক্ষণ
গর্ভধারণের ২১তম সপ্তাহে এসেও মায়ের পেটের আকার দৃশ্যমান হওয়া চলমান রয়েছে। এসময় পেটের আকার বৃদ্ধির কারণে মায়ের শরীরের ভরকেন্দ্রের পরিবর্তন হয়। যারফলে, শরীরের ব্যালান্স ঠিক রাখা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। এছাড়াও শরীরের জয়েন্টগুলোও ঢিলা হয়ে যায় বলে এসময় চলাচলে মায়েদের আরেকটু সাবধানতা অবলম্বন জরুরী।
প্রথম সন্তানের বেলায় হোক আর একাধিক সন্তান হোক গর্ভাবস্থায় দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়াটা একটি স্বাভাবিক ঘটনা। এছাড়াও গর্ভকালীন সময়ে মায়ের শরীরে হরমোনের পরিবর্তনের ফলে মানসিক অবস্থা প্রভাবিত হয়ে আচরণগত পরিবর্তন দেখা দেয়। পাশাপাশি অন্য সময়ের তুলনায় মাকে একটু বেশিই উদ্বিগ্ন মনে হতে পারে। এমন পরিবর্তনে অবাক হওয়ার কিছু নেই। তবে, এই দুশ্চিন্তা এবং ভয় যদি স্বাভাবিক জীবন যাপনে বাধা হয়ে দাঁড়ায় তাহলে আপনার কাছের মানুষদের এবং প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
গর্ভাবস্থায় মায়েদের কোলোস্ট্রাম বা শালদুধ চুঁইয়ে আসা একটি সাধারণ উপসর্গ। এটি গর্ভাবস্থার যেকোনো পর্যায়েই ঘটতে পারে। এতে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। কারো কারো ক্ষেত্রে এক অথবা উভয় স্তন থেকে শালদুধ নিঃসরণ হতে পারে। আবার কারো ক্ষেত্রে যদি প্রসবের আগেও কোলোস্ট্রাম উৎপন্ন না হয় তাতেও সমস্যা নেই।
গর্ভধারণের ২১তম সপ্তাহে গর্ভের শিশুর বৃদ্ধি
গর্ভধারণের ২১তম সপ্তাহে এসে পূর্ববর্তী সপ্তাহগুলোর তুলনায় গর্ভের শিশুর উচ্চতা হঠাৎ বৃদ্ধি পায়। গর্ভাবস্থার ২১তম সপ্তাহে এসে আপনার গর্ভস্থ ভ্রূণটি একটি গাজরের সমান। যা লম্বায় প্রায় ১০ দশমিক ৫১ ইঞ্চির মত। যার ওজন প্রায় ৩৬০ গ্রাম ।
আপনার গর্ভস্থ ভ্রুনটি বেশিরভাগ পুষ্টি প্লাসেন্টার মাধ্যমে পেলেও গর্ভধারণের ২১তম সপ্তাহে অ্যাম্নিওটিক ফ্লুইড থেকেও স্বল্প পরিমাণে পুষ্টি গ্রহণ শুরু করে। আর এই অ্যাম্নিওটিক ফ্লুইড বাচ্চার খাদ্যগ্রহণ ও পরিপাকতন্ত্রের বিকাশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ।
গর্ভধারণের ২১তম সপ্তাহে এসে ক্যাপিলারিস নামক ক্ষুদ্র রক্তবাহী নালী তৈরী হতে শুরু করে। যা ভ্রুণের ধমনী ও শিরার মাঝে সংযোগ স্থাপন করে থাকে। অন্যদিকে, এ সময় থেকেই ভ্রূণের মাথার চুল, ভ্রু ও চোখের পাতার লোমগুলো আরও বেশী ঘন ও স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
গর্ভাবস্থার ২০তম সপ্তাহ পর্যন্ত ভ্রূণের লিভার ও স্পøীন, রক্তকণিকা তৈরি করলেও ২১তম সপ্তাহ থেকে ভ্রূণের বোন ম্যারো রক্তকণিকা উৎপন্ন শুরু করে। গর্ভধারণের ২১তম সপ্তাহে এসে ভ্রুণের শরীরের পেশীগুলো মস্তিষ্কের সাথে নিউরনের মাধ্যমে সংযোগ স্থাপন করে। অন্যদিকে, শক্ত হয়ে ওঠা হাঁড়গুলো আরো বেশী বিকশিত হওয়ার ফলে ভ্রূণ তার হাত পায়ের উপর আরো বেশী নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। যার ফলে, ভ্রুণটি আরও বেশী শক্তিশালী হয়ে ওঠার সাথে সাথে হাত পা নড়াচড়া করার মাত্রা বেড়ে যায়।
এতদিন ভ্রূণের নড়াচড়াগুলো আপনার কাছে সুড়সুড়ির মতো মনে হলেও এখন থেকে তা শক্তিশালী আঘাত মনে হতে পারে।
গর্ভাবস্থার ২১তম সপ্তাহের মধ্যেই শিশুর ঘুমানো এবং জেগে থাকার রুটিন তৈরী হলেও তা মায়ের জেগে থাকা বা ঘুমানোর সাথে নাও মিলতে পারে। দেখা যায়, রাতে মায়েরা ঘুমিয়ে থাকলেও শিশু জেগে আছে এবং নড়াচড়া করছে ।
এ সপ্তাহে করনীয়
গর্ভাবস্থায় ব্লাডারের উপর অতিরিক্ত চাপ বেড়ে যাওয়ায় মূত্রত্যাগের সময় মায়েদের ব্লাডার পুরোপুরি খালি হয়না। এতে করে ব্যাকটেরিয়া বংশবিস্তারের সুযোগ পায়। ফলে ইউরিন ইনফেকশনের ঝুঁকি বেড়ে যায়। ইনফেকশনের ঝুঁকি কমাতে দিনে অন্তত ১০ গ্লাস পানি পান করুন। প্রস্রাব আটকে না রেখে ব্লাডার পুরোপুরি খালি করার চেষ্টা করুন।
এ সময় ব্রণের হাত থেকে রক্ষা পেতে ভালো সাবান বা ফেস ওয়াশ দিয়ে দিনে অন্তত দুইবার মুখ ধোয়ার চেষ্টা করুন। তাছাড়াও, মেক-আপ বা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন এবং অয়েল ফ্রি এবং সুগন্ধিমুক্ত পণ্য ব্যবহার করুন। শিশুর নিরাপত্তায় ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া যেকোন ধরণের ওষুধ সেবনে বিরত থাকুন।
গর্ভাবস্থায় নির্গত হওয়া শালদুধ যদি পুঁজের মত মনে হয় অথবা ব্যাথা অনুভব হয়, সাথে সাথে চিকিৎসককে জানান। হাতে আংটি পড়ার অভ্যাস থাকলে এখন থেকেই তা পরিহার করুন। গর্ভাবস্থায় মায়ের শরীরে পানি এসে আঙ্গুল ফুলে গিয়ে আংটি ব্যবহার বিপদজনক হতে পারে।
খাবারের বিষয়ে শরীরের স্বাভাবিক এবং সাধারণ প্রয়োজনগুলো মেটাতে পুষ্টিকর খাবার খাওয়া চলমান রাখুন। সাথে সাথে নিকোটিনযুক্ত পন্য পরিহারের সাথে সাথে জাঙ্কফুড এড়িয়ে চলুন।
এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য ধন্যবাদ। পরবর্তী ভিডিওতে সপ্তাহ অনুযায়ী গর্ভাবস্থা সিরিজের ২২তম সপ্তাহের লক্ষণ ও পরিবর্তন নিয়ে- আপনাদের সামনে হাজির হবো। ভাল থাকবেন সুস্থ থাকবেন, আল্লাহ হাফেজ।