এমদাদুল হক, শিবগঞ্জ (বগুড়া):
” শীল পাটা ধার করাবেন…. শীল পাটা” এই হাক ডাক দিয়ে বগুড়ার শিবগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা চষে বেড়ান রেজাউল করিম। ৩৫ বছর ধরে শীল পাটায় ধার দিয়ে সংসারের চাকা ঘুরিয়ে চলছেন তিনি। ভারি কোন কাজ কতে পারেন না বলেই এ পেশায় জড়িয়ে পরেছেন। ৬২ বছর বয়সে এসেও জীবন চলার তাগিদে চলছে তার জীবন সংগ্রাম।
রেজাউল করিম বিবাহ সূত্রে বসবাস করেন বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার বাদলাদিঘী গ্রামে। তার আদি নিবাস চাপাই নবাবগঞ্জ জেলার নাচোলে। স্ত্রী বেলী বেগমকে বিয়ের পর হতেই তিনি বসবাস করছেন এ উপজেলায়। চার সন্তানের জনক তিনি। এ পেশায় কাজ করেই বড় করেছেন সন্তানদের। বিয়ে দিয়ে আলাদা সংসার গড়িয়ে দিয়েছেন তাদের।
একটা সময় ছিলো তখন শহর কিংবা গ্রামের পাড়ায় পাড়ায় শীল পাটা ধার করাবেন বলে হাক দিয়ে যেত। তখন গৃহবধূরা তাদের রান্নার মশলা পেশার মূল উপকরণ শীল পাটা নিয়ে এসে তাদের সামনে হাজির হতেন। বলা যায় বাটাল অথবা ছেণী এবং হাতুড়ি দিয়ে ঠুকটাক শব্দের তালে নিপুণ শৈল্পিক কারিগরিতায় এই ফেরিওয়ালারা শিল পাটায় ধার তুলে দিতেন। বিভিন্ন চাহিদা মতো তারা তাদের দক্ষতার মাধ্যেমে শীল পাটায় বিভিন্ন চিত্র ফুটিয়ে তুলতেন। এই ছেণী, বাটাল ও হাতুড়ির মেল বন্ধনে ঠুকটাক মধুর শব্দের তালে ধার করাতেন শীল পাটা। এই কর্ম দেখার জন্য ভীড় জমাতেন এলাকার শিশু সহ বৃদ্ধরাও। তবে আজ কর্ম ব্যস্ততার মধ্যেও শিবগঞ্জের এক পাড়ায় বহুদিনের পুরনো সুরকানে বেজে উঠল। এক ফেরিওয়ালা হাক দিচ্ছেন “শিল পাটা ধার করাবেন”।
এখন বিভিন্ন রকম যান্ত্রিক সুবিধা হয়ে গেছে মশলা পেশার জন্য । পাশাপাশি প্যাকেটের গুড়ো মশলা মানুষের রান্নাঘরের পরিশ্রম কমিয়ে সুবিধা করে দিয়েছে। তাই এখন আর কেউ বেশি শীল পাটা ব্যবহার করেন না। সেহেতু অতীত থেকে বর্তমান সময়ে রোজগার হচ্ছে অনেকটাই কম। তথ্য প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে বিলীন হয়ে যাচ্ছে অনেক জিনিসই যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের এক গুরুত্ব ভূমিকা ছিল। যান্ত্রিক শব্দের দাপটে সেই “শীল পাটা ধার করাবেন” ফেরিওয়ালার হাক ডাককে যেন কণ্ঠরোধ করে দিচ্ছে। হয়ত আগামী দিনে শীল পাটাসহ এই কর্মের সাথে যারা যুক্ত তাদের খুজে পাওয়া দুর্বিসহ হয়ে উঠবে।
রেজাইল করিম জানান, আমি বিগত ৩৫ বছর এই কাজ করে আসছি। আগে দিনে ৩০০-৪০০ টাকা রোজগার হতো এখন দিনে দু-আড়াইশোর বেশি হয়না। অন্য কোন কাজ করতে পারিনা তাই আজও ধরে রেখে চালিয়ে যাচ্ছি।