মৌসুমী ইসলাম:
মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর, বগুড়া-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও দৈনিক ইত্তেফাকের সাবেক উত্তরাঞ্চলীয় আবাসিক প্রতিনিধি মরহুম আমান উল্লাহ খানের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়েছে। ১৫ মার্চ সোমবার সন্ধ্যায় এ উপলক্ষে বগুড়ার শেরপুর প্রেসক্লাবে এক স্মরণ সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
শেরপুর প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি ও দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার শেরপুর (বগুড়া) সংবাদদাতা আব্দুল মান্নানের সভাপতিত্বে ও সাংবাদিক আইয়ুব আলীর পরিচালনায় আয়োজিত স্মরণ সভা ও দোয়া মাহফিলে বক্তব্য রাখেন, শেরপুর শহিদীয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওঃ হাফিজুর রহমান, শেরপুর ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক আব্দুল মান্নান, প্রভাষক আব্দুস সাত্তার,আওয়ামীলীগ নেতা মনিরুজ্জামান জিন্নাহ। এর আগে দুপুরে বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় মরহুম আমান উল্লাহ খান প্রতিষ্ঠিত জয়লাজুয়ান ডিগ্রি কলেজ আয়োজিত আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে বক্তব্য রাখেন, শেরপুর উপজেলা ভাইচ চেয়ারম্যান শাহজামাল সিরাজী, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক উপ-পরিচালক আব্দুর রউফ খান, কলেজ পরিচালনা কমিটির সদস্য আব্দুর রহমান সরকার, সুঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সাঈদ, কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ হোসেন আলী, আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুল গফুর প্রমূখ।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেছেন,স্বাধীন বাংলাদেশে সবচাইতে প্রভাবশালী ও জনপ্রিয় সংবাদ পত্র ‘দৈনিক ইত্তেফাক’-এর সাথে মানিক মিয়ার হাত ধরে যুক্ত হয়েছিলেন আমান উল্লাহ খান। সমগ্র উত্তরবঙ্গকে মেলে ধরেছিলেন ইত্তেফাকের পাতায় পাতায়। উত্তরবঙ্গের সংকট সম্ভাবনা, এখানকার মানুষের হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখের কথা, দারিদ্র্যপীড়িত জনপদের ব্যাথা-বেদনার কথা ফুটিয়ে তুলেছেন ইত্তেফাকের পাতায়। সাংবাদিকতা যে কত বড় চ্যালেঞ্জিং মিশনারি কাজ সেটা শিখেছিলেন তাঁরই গুরু এই মাটিরই সন্তান এদেশের কিংবদন্তি সাংবাদিক-সম্পাদক মুহঃ আসফ-উদ-দৌলা রেজার কাছে। গুরুর প্রেরণা, পরামর্শ ও নির্দেশনায় ব্রতচারীর মত ছুটে গেছেন নগর থেকে পল্লী, শিল্প-কারখানা থেকে কৃষিভূমিতে। শিক্ষাঙ্গন থেকে কুটির শিল্পাঙ্গনে। উত্তরবঙ্গে আমান উল্লাহ খান হয়ে উঠেছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী সংবাদ-ব্যাক্তিত্য। ঈর্ষনীয় জনপ্রিয়তার অধিকারী আর অমিত প্রভাবশালী। পাশাপাশি বগুড়ায় নিজে একটি দৈনিক পত্রিকা প্রকাশ করেছেন নিজের সম্পাদনায়। তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ট সহচর, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও সংসদ সদস্য । তাঁর স্মৃতি রবে বহু কাল। তার জন্মভূমি এই অঞ্চলে স্মৃতি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া কর্তব্য।
উল্লেখ্য, সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদ আমান উল্লাহ খান ১৯৪১ সালে বগুড়া জেলার শেরপুর উপজেলার জয়লা জুয়ান গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি ১৯৬৯ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত বগুড়া প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পত্রিকা দৈনিক বাংলাদেশ এর সম্পাদক ছিলেন। ১৯৬৪ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত দৈনিক ইত্তেফাকের উত্তরাঞ্চলীয় আবাসিক প্রতিনিধি ছিলেন তিনি। তিনি ৬ দফা আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণসহ তৎকালীন সকল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। তিনি ১৯৬৮ সালে বগুড়ার ইতিহাস বিষয়ক গ্রন্থ ‘আজকের বগুড়া’ রচনা করেন। ১৯৭৩ সালে বগুড়া-৫ (শেরপুর-ধুনট) আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮২-১৯৮৭ সাল পর্যন্ত তিনি বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতির দায়িত্বও পালন করেন।
তিনি কিডনি, হার্টসহ নানা ধরনের রোগের জটিলতা নিয়ে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (শজিমেক) এর নিউরো মেডিসিন বিভাগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৫ মার্চ ২০১৮ সালে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর।