এস,আই শাওন:
মাটি ও বালুদস্যুদের কবলে পড়েছিল বগুড়ার শেরপুর উপজেলা। উপজেলার অন্তত দুইশ’ পয়েন্ট দিয়ে ড্রেজার লাগিয়ে দিনে-রাতে অবৈধভাবে বালু ও মাটি উত্তোলন করে বিক্রি করে আসছিল প্রভাবশালীরা। মাটি ও বালুবাহী ট্রাক-ট্রাক্টরের বেপরোয়া চলাচলের কারণে গ্রামীণ সড়ক থেকে শুরু করে শহরতলীর রাস্তা ক্ষত-বিক্ষত করে হলেও আবাদী জমির মাটি ও নদীর বালুকে পুঁজি করে রাতারাতি শূন্য থেকে বিলাসবহুল বাড়ি-গাড়ি ও অঢেল ধন-সম্পদের মালিক হয়েছেন এ উপজেলার মাটিদস্যূরা।
তথ্যমতে, বগুড়ার শেরপুর উপজেলার সুঘাট ইউনিয়ন, উপজেলার বিশালপুর ইউনিয়নের পানিসারা, কুসুম্বী ইউনিয়নের আমন, টুনিপাড়া, গাড়ীদহ ইউনিয়নের হাপুনিয়া, শাহ বন্দেগী ইউনিয়নের ঘুটু বটতলা, উচরং মির্জাপুর, সুখানগাড়ী, ছোনকা, ছোট ভবানীপুরের পাঁচদেউলীসহ প্রায় ২০০টি পয়েন্ট দিয়ে মাটিদস্যু চক্র বেশ সক্রিয়।
তারা নদী তীরবর্তী বিভিন্ন পয়েন্টসহ অবৈধভাবে ড্রেজার ও শ্রমিক দিয়ে ফসলী জমির মাটি কেটে ট্রাক্টরযোগে পুকুর-ডোবা, নিচু জমি ভরাট ও ইটের ভাটাসহ নানা স্থানে সরবরাহ করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে । তাদের দমাতে, বগুড়া জেলা প্রশাসক জিয়াউল হকের নির্দেশনা ও শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট লিয়াকত আলী শেখের সার্বিক তত্ত্বাবধানে এই করোনাকালেও প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতকল্পে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাসহ সরকারী অফিসের রুটিন দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি স্থানীয় এসব পরিবেশ বিনষ্টকারী, অবৈধ মাটি ব্যবসায়ীদের শায়েস্তা করতে মাঠে নামেন শেরপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাবরিনা শারমিন।
উপজেলা (ভূমি) অফিসসূত্র জানায়, গত তিনমাসে ১০টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে কৃষিজমি ও পরিবেশ রক্ষায় ১৩টি মামলায় ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন শেরপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাবরিনা শারমিন । এরমধ্যে শুধু গত মার্চ মাসেই ৬ মামলায় ২ লক্ষাধিক লাখ টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছেন তিনি।
পাশাপাশি, শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ লিয়াকত আলী সেখ গত মার্চ মাসে ৪ টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে ৪ মামলায় ৪৫,০০০/- টাকা জরিমানা করেছেন।
এ প্রসঙ্গে শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট লিয়াকত আলী শেখ বলেন, মাটি ও বালুদস্যুদের কবলে পড়ে যেমন নদী দিনে দিনে সরু খালের মতো হয়ে পড়ছে। বিলুপ্ত হয়ে পড়ছে জলজ প্রাণি ও মাছ। এতে পরিবেশ বিপর্যয়েরও আশঙ্কা থেকে যায়। পরিবেশকে হুমকীর হাত থেকে বাঁচাতে ও কৃষি জমি রক্ষায় নদী থেকে বালু উত্তোলন ও মাটি কাটা বন্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা অব্যাহত থাকবে। শুধু অর্থদন্ড বা মেশিনারীজ জব্দ নয়, প্রয়োজনে আরো কঠোর হবে উপজেলা প্রশাসন। এবং এধরণের অবৈধ কার্যক্রম বন্ধে অব্যাহত থাকবে উপজেলা প্রশাসনের অভিযান।
উল্লেখ্য, সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাবরিনা শারমিন ২০২০ সালের ২৪ অক্টোবর শেরপুরের এসিল্যান্ড হিসেবে যোগদান করেন। এসিল্যান্ড হিসেবে পদায়নের জন্য কিছুটা সময় অন্যত্র প্রশিক্ষণে ছিলেন। ০৮ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে এ উপজেলায় কর্মকাল শুরু করেন। এর আগে তিনি নরসিংদী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে কর্মরত ছিলেন। তার বাড়ি রংপুরের সদরে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে পড়াশোনা শেষে ৩৫তম বিসিএসের মাধ্যমে এডমিন ক্যাডারে যোগদান করেন ।