এস,আই শাওন:
বগুড়ার শেরপুরে পাতিসরালির ৭টি ছানা উদ্ধার করা হয়েছে। ২৭ জুলাই (মঙ্গলবার) বিকাল ৫ টায়, উপজেলার গাড়িদহ ইউনিয়নের কাফুরা পূর্ব পাড়া থেকে পাতি সরালির ছানাগুলো উদ্ধার করা হয়। অভিযানে সহযোগিতা করেন শেরপুর থানা পুলিশ।
জানা যায়, উপজেলার গাড়িদহ ইউনিয়নের কাফুরা পূর্ব পাড়ার (কাফুড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন) সাইদুল ইসলাম পালন করার উদ্দেশ্যে গাছ থেকে ৭ টি বালি হাস এর বাচ্চা পেরে নিয়ে তার বাড়িতে লালন পালন শুরু করে। এমন তথ্য জানিয়ে, শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ ময়নুল ইসলামের কাছে ফোন আসে। ফোন কল পাওয়া মাত্র শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ ময়নুল ইসলাম শেরপুর উপজেলায় পরিবেশ ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ নিয়ে কাজ করা, “পরিবেশ প্রতিরক্ষা সংস্থা” শেরপুর, বগুড়ার সভাপতি সোহাগ রায় সাগরকে জানান। ঘটনার সত্যতা নিরূপণ করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সোহাগ রায় সাগর ইউএনও’কে জানান।
“পরিবেশ প্রতিরক্ষা সংস্থা” শেরপুর, বগুড়ার সভাপতি সোহাগ রায় সাগর বলেনইউএনও স্যারকে জানানো মাত্র, স্যার অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌছায় এবং বাচ্চাগুলো জব্দ করে উদ্ধার করার উদ্ধার করার পর আমাদের সংগঠনের জিম্মায় দিয়ে দেয়।
অপরাধী বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন সম্পর্কে অবগত না থাকায় তাকে মুচলেকা নিয়ে ক্ষমা করে দেওয়া হয়। তারপর বাচ্চাগুলো শারীরিক ভাবে সুস্থ আছে কিনা জানার জন্য উপজেলা প্রানীসম্পদ কর্মকর্তা (ভেটেরিনারি সার্জন), ডা.রায়হান পিএএ কে দেখিয়ে পরামর্শ গ্রহণ করা হয়। সুস্থ হয়ে উঠলে পাতি সরালির ছানাগুলোকে মুক্ত আকাশে অবমুক্ত করা হবে।
সোহাগ রায় জানান, ” এখন এই প্রাণীটির প্রজনন সময়। বর্তমানে আমাদের আশেপাশে নদী-নালা বা বিলের মধ্যে এই প্রানীটির প্রজননের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ না থাকায় তারা বসত বাড়ির আশেপাশে অথবা ছোট পুকুরের আশেপাশে ঘন গাছগাছালির মধ্যে ডিম দিয়ে বংশবিস্তার করে তাই অনেক সময় মানুষের নজরে চলে আসে । তাই আমাদের উচিত বন্য প্রাণীর অস্তিত্ব রক্ষায় এবং পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য সবার সার্বিক সহযোগিতায় সংরক্ষণ করতে হবে ।”
উল্লেখ্য, পাতি সরালি হাঁস আমাদের দেশেরই পাখি। গ্রীষ্মে ছোট ছোট জলাশয়ে বাস করে এবং শীত এলেই হাওর-বাওর, নদী-বিলে অস্থায়ীভাবে থাকে। পাতি সরালির বৈজ্ঞানিক নাম Dendrocygna javanica, অর্থাৎ জাভার বৃক্ষবাসী হাঁস। এ ছাড়াও পাখিটি ছোট সরালি, সরালি বা গেছো হাঁস নামেও পরিচিত। এটি Anatidae (অ্যানাটিডি) গোত্র বা পরিবারের অন্তর্গত সুলভ এক প্রজাতির হাঁস। শীত ছাড়া অন্য মৌসুমে ওরা ঝাঁক থেকে বের হয়ে নিজেদের বেঁচে থাকার তাগিদে একক বা জোড়া হয়ে বিভিন্ন ছোট-বড় জলাশয়, ডোবা, বিল, হাওরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে যায়।
তাই একত্রিতভাবে না থাকার কারণে তাদের সংখ্যাটা ব্যাপকভাবে চোখে পড়ে না। কিন্তু শীত মৌসুমে এলেই ওরা সবাই একটি জলাশয়ে বাঁচার তাগিদে এসে আশ্রয় নেয়। দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ আমাদের দেশে বসবাস করা এই পাখিটাকে ‘পরিযায়ী পাখি’ বলে ভুল করে আসছে।
পাতি সরালি নিশাচর স্বভাবের আবাসিক পাখি। দিনে জলমগ্ন ধানক্ষেত ও বড় জলাশয়ের আশপাশে দলবদ্ধভাবে জলকেলি আর খুনসুটিতে ব্যস্ত থাকলেও রাতে খাবারের সন্ধানে চরে বেড়ায় এরা। এদের প্রধান খাবার পানিতে থাকা গুল্ম জলজ উদ্ভিদ, নতুন কুঁড়ি, শস্যদানা, ছোট মাছ, ব্যাঙ, শামুক, কেঁচো ইত্যাদি। পাখিটির মাথা, গলা ও বুক বাদামি, কালো পা এবং ঠোঁট ধূসর-কালচে রঙের। পিঠে হালকা বাদামির ওপর নকশা আঁকা ও লেজের তলা সাদা। পুরুষ ও স্ত্রী পাখি দেখতে একই রকম। প্রজনন মৌসুমসহ অন্য সময় এরা জুটি বেঁধে পৃথকভাবে দুর্গম বিল-হাওরে বসবাস করে। তাই শীত ছাড়া এদের একসঙ্গে বেশি দেখা যায় না। পাতি সরালির ওজন প্রায় ৫০০ গ্রাম, দৈর্ঘ্য ৪৫ সেন্টিমিটার। সাধারণত এদের ডানা ১৮ দশমিক ৭ সেন্টিমিটার, ঠোঁট চার সেন্টিমিটার এবং লেজ ৫ দশমিক ৪ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে।