শহিদুল ইসলাম শাওন, শেরপুর (বগুড়া):
‘সেবার সৌন্দর্যে উৎপাদন উন্নয়নে প্রাণীসম্পদ বিভাগ শেরপুর’-এই স্লোগানকে ধারণ করে মডেল হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে শেরপুর উপজেলা প্রাণীসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতাল। শুধু অবকাঠামোগত উন্নয়ণের ছোঁয়াতেই নয় সেবাতেও নিয়ে আসা হয়েছে বৈচিত্রময় পরিবর্তন। আর এসকল পরিবর্তনের মাধ্যমে শেরপুর উপজেলা প্রাণীসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালটির দৃশ্যপট পাল্টে দিয়েছেন উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ও স্বপ্ন ছোঁয়ার সিঁড়ি উদ্যোক্তা সমন্বয়ক ডা. মো. রায়হান (পিএএ)।
সূত্র জানায়, ডা. মো. রায়হান (পিএএ) গত ১৭ আগস্ট থেকে এই অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত দায়িত্বে ছিলেন। এরপর ১৯ অক্টোবর মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন জারীর মাধ্যমে স্থায়ীভাবে পদোন্নতি পেয়ে এ উপজেলার প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। এরপর থেকেই এই হাসপাতালের দৃশ্যপটে এসেছে আমূল পরিবর্তন।
সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালটিতে সেবাগ্রহীতাদের সেবা সহজিকরণের জন্য সেবা সহজিকরণ ডেস্ক স্থাপন করা হয়েছে। পাশাপাশি খামারী ও দর্শনার্থীদের ভোগান্তি লাঘবে নির্মাণ করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন ওয়েটিং কর্ণার ”মায়াবী অপেক্ষণ”। সাঁটানো হয়েছে প্রাণিসম্পদ কর্ম বন্টন ডিসপ্লে। জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল অনুসরণে সেবা সংক্রান্ত সমস্যায় অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য রয়েছে অভিযোগ বক্স। অসুস্থ প্রাণীর জন্য নির্মাণ করা হয়েছে প্রাণিকল্যাণ শেড। ডিজিটাল তথ্য ডিসপ্লে বোর্ড স্থাপণের পাশাপাশি স্থাপন করা হয়েছে ভ্যাকসিনেশন কর্ণার, পেটস্ সেবা কর্ণার, সার্জিক্যাল ও পোস্টমর্টেম কর্ণার। প্রাণিসম্পদ কানন, এছাড়াও, অফিস স্টাফদের জন্য দৃষ্টিনন্দন কর্পোরেট ডেক্স স্থাপন, আধুনিক সম্মেলন কক্ষ, প্রাণিসম্পদ মুক্তমঞ্চ স্থাপন করেছেন ডা. মো. রায়হান (পিএএ)।
সেবা নিতে আসা এক খামারী দৈনিক ডেল্টা টাইমস্ কে বলেন, শেরপুর উপজেলা প্রাণীসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালের নানামুখি পরিবর্তন দেখে চমকে গেছি। হাসপাতালটির পুরো ক্যাম্পাস জুড়েই দৃষ্টি নন্দন দৃশ্য শোভা পাচ্ছে। সেই সাথে আগন্তুকদের জন্য সেবা সহজিকরণে তাদের যে পদক্ষেপ তা সত্যিই প্রশংসার দাবীদার। প্রাণের জন্য এত সুন্দর পরিবেশ ব্যবস্থাপনার হাসপাতাল সারাদেশের মধ্যে খুঁজে পাওয়া দুস্কর।
এ বিষয়ে বগুড়া জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. রফিকুল ইসলাম তালুকদার দৈনিক বলেন, শেরপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রায়হান যে কাজটা করেছেন এটি একেবারেই জনকল্যাণমুখী। তার কাজের জায়গা ও চমৎকার কর্মপরিবেশ সত্যিই খামারীদের জন্য কল্যাণকর হবে। একইভাবে খামারীরা আগের তুলনায় সেবা নিতে বেশী আগ্রহী হবে। বিশেষ করে প্রাণি চিকিৎসা করাতে এসে যে, পরিবেশের একটা ভোগান্তি থাকে এ অফিসে এলে জনসাধারণ তা ভুলে যাবে।
ডা. রায়হান বলেন, সরকারের প্রাণীসম্পদ নিয়ে যে মিশন-ভিশন এবং ২০৪১’- সালের যে ভিশন রয়েছে সেটি বাস্তবায়নের জন্য পদক্ষেপ নিয়েছেন তিনি। এর অংশ হিসেবে শেরপুর উপজেলা প্রাণীসম্পদ দপ্তরে রেনোভেশন/ইনোভেশন আাইডিয়া বাস্তবায়ন করছেন। যেটা ইতোমধ্যে দৃশ্যমান বলে জানান এই কর্মকর্তা। তিনি আরো বলেন, তৃণমুল পর্যায়ে প্রাণিসম্পদ সেবাকে ত্বরান্বিত করার জন্য এবং জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে ইউনিয়ন প্রাণিসম্পদ সেবা টিম গঠন করে দূর দুরান্তের খামারিদের সময় মুল্য ও ভিজিট কমিয়ে গুনগত সেবাদান করে যাচ্ছে শেরপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ ও ভেটেরিনারি হাসপাতাল।
উল্লেখ্য, দেশি মুরগির জাত সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণ এবং স্বল্প বিনিয়োগে উদ্যোক্তা তৈরিতে অবদান ও জনসেবায় অনবদ্য ভূমিকা রাখায় ডা.মো.রায়হান পিএএ ইতিমধ্যে জাতীয় পর্যায়ে (ব্যক্তিগত শ্রেণি) জনপ্রশাসন পদক, (আর-৬২ তম) বুনিয়াদী প্রশিক্ষণে ২য় স্থান অর্জন করায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে স্বর্ণপদক, নাগরিক সেবায় শ্রেষ্ঠ উদ্ভাবনী কর্মকর্তার স্বীকৃতিস্বরুপ ২০১৯ সালে বগুড়া জেলা প্রশাসন ও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও পদক অর্জন করেছেন। একই বছর রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের পক্ষ থেকে ইনোভেশন শোকেসিং শ্রেষ্ঠ পাইলটিং উদ্যোগ নির্বাচিত হন। ‘এসিআই দীপ্ত কৃষি অ্যাওয়ার্ড ২০২০’ সেরা কৃষি শিক্ষা ব্যাক্তিত্ব এবং সেরা সামাজিক সংগঠক; হিসেবে ২ ক্যাটেগরিতেই একমাত্র সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে ‘এসিআই দীপ্ত কৃষি অ্যাওয়ার্ড ২০২০’ অর্জন করেন তিনি।
ডা. মো. রায়হান ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ালেখা শেষ করে ৩১ তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণের মাধ্যমে চাকরিতে যোগদান করেন। তিনি টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলার শফিকুল ইসলামের ছেলে।