এস, আই শাওন:
একদিকে করোনার মত মহামারি অন্যদিকে ধুলা বালির দূষণ। এই দু’য়ে মিলে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। প্রতিদিনই ধুলার দূষণে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন রাস্তায় চলাচলকারী জনসাধারণ। বেশ কিছুদিন আগে শেরপুর-ধুনট আঞ্চলিক সড়ক প্রশস্তকরণ কাজ শুরু হয়েছে। সেই কারণে সড়কের দুই পাশে ফেলা হয়েছে মাটি। আর স্তুপ করে রাখা মাটির কোল ঘেঁষে যানবাহন চলাচলের কারণে ধুলাবালির পরিমাণ বেড়েছে। এতে প্রতিদিনই ধুলার দূষণ ছড়াচ্ছে। এরফলে নানা রোগে আক্রান্তের শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। সড়কটির আশপাশের ঘর-বাড়ি, দোকান আর গাছপালাও এখন লাল ধুলায় ছেয়ে গেছে। সড়কটি দিয়ে চলাচলের সময় ধুলায় কিছুই দেখা যায় না এমনকি নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হয় চালক ও যাত্রীদের। এই দূষনের জন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মোজাহার এন্টার প্রাইজকেই দায়ি করছেন সচেতন মহল।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বগুড়া জেলার শেরপুর থেকে ধুনট পর্যন্ত সড়কটি প্রশস্তকরণ কাজ শুরু হয়েছে। এ কাজের দায়িত্ব পেয়েছেন মোজাহার এন্টারপ্রাইজ নামের এক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। রাস্তা প্রশস্তকরণের জন্য তারা দ’ুপাশে এলোমেলো ভাবে মাটি ফেলায় এবং সময়মত পানি না দেয়ায় ধুলার দূষণে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। হুমকির মধ্যে পড়ছে জনস্বাস্থ্য। এই স্থানে বর্তমানে আবহাওয়া শুষ্কতার কারণে যান চলাচলের সাথে প্রচণ্ড পরিমাণে ধুলাবালির ছড়িয়ে নানা রোগের আক্রান্ত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এমনকি আবাসস্থলও বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
সড়কের পাশে বসবাসকারী ও ব্যাবসায়ীরা জানান, এ সমস্যা আজকের নয়। দীর্ঘ টালবাহানা শেষে সড়কের উন্নয়নের কাজ শুরু করা হলেও তা চলছে ধীর গতিতে। ফলে সড়কের পাশে থাকা দোকানি ও বাড়ির মানুষদের অবস্থা খুবই খারাপ। এছাড়া সড়কের পাশের বেশির ভাগ পরিবারের সদস্যরা শ্বাসকষ্টসহ নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। সড়ক ভিজিয়ে ধুলা নিবারণের কথা থাকলেও সেটার নাম নেই। মাঝেমধ্যে সড়ক ভেজানো হলেও সেটা নামেমাত্র ও দ্বায়সাড়া। ফলে সেটা কোনো কাজে আসছে না।
পথচারী ও যাত্রীরা জানান, এই সড়ক দিয়ে চলাচল করা চরম দুর্ভোগের ব্যাপার। অসুস্থ কোনো মানুষ এ সড়কে চলাচল করলে আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়বে। সড়ক দিয়ে বড় ধরনের কোনো যানবাহন গেলে ধুলায় অন্ধাকার হয়ে যায় চারদিক। তাছাড়া যানবাহন চলার সময় ছোট-বড় গর্তের ঝাঁকুনিতে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। স্থানীয় বাসিন্দা পলাশ মণ্ডল বলেন, উন্নয়নকাজের ক্ষেত্রে কোনো নিয়ম-নীতি মানা হচ্ছে না। ধুলার জন্য পানি ছিটানোর কথা থাকলেও তা হয় না।
সড়ক খোঁড়াখুঁড়ির পর মাটি অন্যত্র সরিয়ে না নিয়ে সড়কেই ফেলে রাখা হয়। মাটি শুকিয়ে ধুলি হয়ে বাতাসে উড়ে। জনবহুল এলাকায় সড়কের কাজ দ্রুত শেষ না করে কাজ ফেলে রাখছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। অপরিকল্পিতভাবে রাস্তা প্রশস্তকরণের কাজ চলায় ধুলা-দূষণের মত বিভিন্ন সমস্যায় পড়ছেন তারা। তাই ধুলা বালির এ সমস্যা থেকে সমাধান পেতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দ্রুত উন্নয়ন কাজ শেষ করতে এবং নিয়মিত ধুলাবালি নিরাময়ে পানি ব্যবহারের অনুরোধ জানান।
পথচারী নাসিমা বেগম বলেন, বর্তমানে রাস্তায় বের হওয়ার পরিস্থিতি নেই। অতি প্রয়োজনে ছেলে-মেয়ে নিয়ে বাসা থেকে বের হলেও ধুলায় চোখ-মুখ আচ্ছন্ন হয়ে যায়। আক্রান্ত হতে হয় বিভিন্ন রোগে। এ রকম পরিস্থিতির পরিত্রাণ দরকার।
ঘাটপাড় এলাকার দোকানি আরিফ বলেন, ধুলার যন্ত্রণায় দোকানের সামানের অংশ ঢেকে রেখেও রক্ষা পাওয়া যায় না। কয়েক মিনিটেই দোকানে ধুলার স্তর পড়ে যায়। দোকানের মালামাল নষ্ট হচ্ছে। শ্বাসকষ্টের রোগী হয়ে গেছি। বর্তমানে বিপজ্জনক মাত্রায় উড়ছে ধুলা।
এ ব্যাপারে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মোজাহার এন্টার প্রাইজের প্রজেক্ট ম্যানেজার মো. এমদাদ হোসেন বলেন, সড়ক উন্নয়ন কাজের জন্য সাময়িকভাবে জন সাধারণের সমস্যার জন্য আমরা দুঃখিত। আমরা ধুলা নিবারণের জন্য সময়মত পানি ব্যবহার করছি। আবহাওয়া শুষ্ক থাকায় এবং অতিমাত্রায় বড় বড় যানবহন চলায় দ্রুত ধুলা ছড়াচ্ছে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে এ সমস্য সমাধান হবে বলে আমি আশা করছি।
এ ব্যাপারে শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাজিদ হাসান সিদ্দিকী বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি সময়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। এখন শীতকালের কারণে বাতাসে ধুলাবালির পরিমাণ বেশি হওয়ায় শ্বাসকষ্ঠজনিত রোগসহ বিভিন্ন ধরণের রোগ বালাই হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। শীত ও ঠাণ্ডা জনিত কারণে করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর্দ্রতা ও তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় নানা ধরনের সমস্যা হতে পারে। ধুলাবালি ও করোনার আক্রমণ থেকে পরিত্রাণ পেতে সকলকে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে।